ভুল জায়গায় সেক্রিফাইজ আর ভুল মানুষের সাথে কম্প্রোমাইজ আপনাকে না দিবে সুখ, না দিবে সফলতা।
ভুল জায়গায় সেক্রিফাইজ আর ভুল মানুষের সাথে কম্প্রোমাইজ আপনাকে না দিবে সুখ, না দিবে সফলতা। কারো কারো ব্যাংক ব্যালেন্স না থাকার কারণে কেউ অসুখী। আবার কেউ আস্ত একটা ব্যাংকের মালিক হয়েও অসুখী। 'আমার সাথেই কেন সবসময় এমন হয়? সৃষ্টিকর্তা কেন সবসময় আমাকেই কষ্ট দেন? সবাই কেন আমাকেই ভুল বুঝে?' হ্যা, এরকম কথা অনেকেই বলেন। নারে ভাই, আপনার সাথেই সবসময় এমন হয় না, আরো অনেকের সাথেই হয়। সৃষ্টিকর্তা বেছে বেছে শুধু আপনাকেই কষ্ট দেন না, এরকম টুকিটাকি কষ্ট সবার জীবনেই আসে। আর আপনাকে সবাই ভুল বুঝে? হাহাহা, ভুল সবাই সবাইকেই বুঝে। এমনকি খেয়াল করে দেখেন এটুকু বয়সে আপনিও কতজনকেই ভুল বুঝেছেন!
আপনার সব কাজ সবাই পছন্দ করবে না। সবচেয়ে বড় ইউটিউব চ্যানেলের সেরা জনপ্রিয় ভিডিওতে ও দু'য়েকটা ডিসলাইক পড়ে, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে নিয়েও সমালোচনা হয়, ওয়ার্ল্ড ফেমাস এন্ড পপুলার মুভি 'টাইটানিক' কিংবা 'থ্রি ইডিয়টস' দেখেনি এমন ইয়াং ম্যানও আছেন। তাই বলে মুভিগুলো জনপ্রিয়তা কমে যায়নি। বাংলা সাহিত্য নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত কাব্যগ্রন্থ 'গীতাঞ্জলি' কতজনেই বা পড়েছেন? রবিঠাকুর কি এটা নিয়ে মাইন্ড করেছেন? নাকি 'অনেকেই পড়েনি' এই কারণে নোবেল কমিটি তার নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নিয়েছেন? মানুষ তো ধর্ম নিয়েও কটুক্তি করে। আর আপনি কিসের কী! কোন এক ম্যাচে দ্রুত সেঞ্চুরি করা ফেমাস ক্রিকেটারও অন্য কোনো ম্যাচে জিরো রানে আউট হন। সবসময় সেরা কাজটা আপনার থেকেই পয়দা হবে সেটা ধরে কেন বসে আছেন? আপনার সকল ভালো কাজ সবাই রিসিভ করবে সে আশা ছাড়ুন। সবসময় আপনিই সেরা হবেন এই অহংকারটাও ছাড়ুন।
যে পোশাকটা আপনার অপছন্দ হওয়াতে না কিনে চলে এসেছেন, কেউ হয়তো শুধু সেই পোশাকটা কেনার জন্যই মার্কেটে গিয়েছিল। যে মুভিটা দেখার জন্য আপনি একসময় ক্লাস ফাঁকি দিয়েছিলেন, কেউ হয়তো সেই মুভিটা ১০ মিনিট দেখেই বন্ধ করে দিয়েছে। যে মানুষটাকে আপনি টোটালি পছন্দ করেননা, কেউ হয়তো শুধু তারই একটা অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য লাইন ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে। মোবাইলে যে গেমটা আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে খেলেন, কেউ হয়তো ঐ গেমটা ইন্সটলই করেনি। সবার পছন্দ এক হবে না, হওয়ার কথাও না।
আপনার কষ্টের অর্ধেক কারণ মানুষের ভাবনা নিয়ে। ৬৫ বছর বয়সে যে লোকটা চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে অভাবের তাড়নায়, হতাশা কারণে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন,৮০ বছর বয়সে ঐ বুড়া লোকটাই হয়েছিলেন বিলিওনিয়ার। ৬৫ বছর বয়সে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকেন ফ্রাই রান্না করে বিক্রি করতেন৷ মানুষ হেসেছিল তার বুড়া বয়সে এই ভীমরতি দেখে। কিন্তু আজ ঐ বুড়া লোকটার প্রতিষ্টা করা KFC-ই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত। লোকে কী ভাববে এসব যদি ঐ বুড়া লোকটা সেদিন ভাবত তবে তাকে আত্মহত্যায় করতে হত। প্রথম গানের ক্যাসেট বের করার জন্য জেমস কতজনকে গিয়ে অনুরোধ করছিলো। মোশাররফ করিমকে প্রথম মঞ্চ নাটকে চান্স পাওয়ার জন্য কতবার ধর্ণা দিয়েছিলো সেটা কেউ মনে রাখেনি। একইভাবে কেউ মনে রাখেনি আপনি ছোটবেলায় দেয়াল ধরে উঠতে গিয়ে কতবার পড়ে গিয়েছিলেন। হুমায়ুন আহমেদের প্রথম বই 'নন্দিত নরকে' প্রকাশ করার জন্য কত প্রকাশকের কাছে গিয়ে মিনতি করেছেন কেউ তার খবর রাখেনি। আজ তারা সবাই সমানে জনপ্রিয়।
মানুষ কী ভাববে এসব ছাড়ুন। আপনি সফল হলে তারা হিংসা করবে, ব্যর্থ হলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে। এগিয়ে যেতে চাইলে বাঁধা দিবে, থেমে থাকলে লজ্জা দিবে। ভুল করলে সমালোচনা করবে, ভালো করলে ভুল খুঁজবে। উপকার করলে ভাববে 'লোক দেখানো', কিছু করতে না পারলে ভাববে হিংসুটে।
আমরা অন্যের দোষ খুঁজি মাইক্রোস্কোপ দিয়ে আর নিজের দোষ দেখি চোখে হাত দিয়ে ঢেকে। চোখ পৃথিবীর সবকিছু দেখতে পায়। কিন্তু চোখের ভেতরে যখন কোনো ময়লা পড়ে, চোখ তখন তা দেখতে পায় না। আমাদের মধ্যেও অনেকেই আছেন সে অন্যের সব দোষ দেখতে পায়, নিজের দোষটা যেন কোনোভাবেই তার চোখে পড়ে না। আপনি তাই করুন যা আপনার ভালো লাগে। যদি লোকে কী ভাববে এই চিন্তায় দিন পার করেন তবে এই জীবনে সুখ আপনার কাছে আর আসবে না। আমরা নিজের সমালোচনা করতে পারিনা বলেই অন্য কেউ আমাদের নেগেটিভ সমালোচনা করার সুযোগ পেয়ে যায়, আর তা শুনে আমাদেরও কষ্ট লাগে। আজকাল তো ইন্টারভিউ বোর্ডেও জিজ্ঞেস করা হয় আপনার দুর্বলতা কী?
Comments
Post a Comment